ভাষা হলো মানুষের যোগাযোগের মূল মাধ্যম, যা শব্দ ও প্রতীকের মাধ্যমে ব্যক্তির চিন্তা ও অনুভূতি প্রকাশের অন্যতম উপায়। তবে মাতৃভাষার প্রভাব ব্যক্তির জীবনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ এটি তার শৈশব এবং প্রথম ভাষার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
একজন শিক্ষার্থী যখন তার মাতৃভাষা শেখে, তখন সে শুধুমাত্র ভাষাগত দক্ষতাই নয়, বরং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং সাক্ষরতা দক্ষতার মতো অন্যান্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার বিকাশ ঘটায়। এর ফলে শিক্ষার্থীরা আনুষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও উপকৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোনো শিশু যদি তার মাতৃভাষায় শব্দের অর্থ অনুধাবনের সক্ষমতা অর্জন করে, তবে সেই দক্ষতা সহজেই দ্বিতীয় ভাষা শেখার সময়েও কাজে লাগে। কিন্তু সরাসরি দ্বিতীয় ভাষার মাধ্যমে এই দক্ষতা অর্জন করা অনেক কঠিন।
মাতৃভাষা শিশুকে সমালোচনামূলক চিন্তা এবং শিক্ষার দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিম কামিন্সের গবেষণায় উঠে এসেছে যে, মাতৃভাষায় শিক্ষাদান শিশুদের শিক্ষাগত বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তিনি দেখিয়েছেন যে, একাধিক ভাষা শেখার মাধ্যমে শিশুরা তাদের ভাষাগত জ্ঞানের পরিধি প্রসারিত করতে সক্ষম হয়, যা ভবিষ্যতে তাদের ভাষার উপর গভীর ধারণা গঠনে সহায়ক হয়।
অধ্যাপক কামিন্স আরও উল্লেখ করেছেন যে, মাতৃভাষা শেখা শিশুরা দ্বিতীয় ভাষা শেখার সময়েও উন্নত দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হয়। তিনি দেখিয়েছেন, মাতৃভাষায় শেখা দক্ষতাগুলো সহজেই অন্যান্য ভাষায় স্থানান্তরিত হয়, যার ফলে শিশুরা তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ও শক্তিশালীভাবে ধারণ করতে পারে।
মাতৃভাষার একটি শক্ত ভিত্তি শিশুদের অতিরিক্ত ভাষা শেখার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার বিকাশ ঘটায়। তারা প্রথম ভাষা শেখার সময় যে ব্যাকরণগত ধারণা গ্রহণ করে, তা অন্যান্য ভাষা শেখার ক্ষেত্রেও কাজে লাগে। এভাবেই মাতৃভাষা শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়ের গঠনেও বড় ভূমিকা পালন করে। প্রথম ভাষার মাধ্যমে শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে ওঠা শিশুরা নিজের মধ্যে এবং সমাজে তাদের অবস্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পায় এবং আত্মবিশ্বাসী হয়।
শিক্ষার ক্ষেত্রে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, শিশুরা তাদের মাতৃভাষায় দ্রুত এবং আরও ভালোভাবে শেখে। শিক্ষাবিদ পি শ্রী নায়ার উল্লেখ করেছেন যে, যেসব শিশুরা মাতৃভাষা হিসেবে ইংরেজি শিখছে না, তাদের শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে দুর্বলতার ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারের শিশুরা ইংরেজি শেখার ক্ষেত্রে পরিবারের কাছ থেকে সহায়তা কম পায়। ফলে তারা শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে।
মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ শিশুদের জন্য দ্বিতীয় ভাষা শেখাকে সহজ করে তোলে। আমাদের শিশুরা বাংলায় দক্ষ হওয়ার কারণে তারা অন্য ভাষাও দ্রুত শিখতে সক্ষম হয়। এভাবে মাতৃভাষা শিশুদের সমালোচনামূলক চিন্তা এবং শিক্ষার দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ শিশুরা পাঠ্যক্রমের আরও ভালো বোঝার ক্ষমতা অর্জন করে। ফলে অন্য ভাষায় স্থানান্তরিত হলেও শিক্ষার দক্ষতা পুনরায় শেখার প্রয়োজন পড়ে না। মাতৃভাষায় শেখা শিশুরা তাদের আশেপাশের পরিবেশে আরও বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে এবং তারা বিদ্যালয়ের কার্যক্রমে আরও বেশি সম্পৃক্ত থাকে।
মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং বিদেশি ভাষা শেখার চাপ থেকে তাদের রক্ষা করে। ফলে তারা একাডেমিক ক্ষেত্রে আরও ভালো পারফরম্যান্স করে