সাজেক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা: কখন এবং কীভাবে যাবেন?

সাজেকের নাম শুনলেই প্রকৃতিপ্রেমীদের চোখে ভেসে ওঠে মেঘে ভরা এক জগৎ। এখানে প্রকৃতির রূপ পরিবর্তিত হয় মুহূর্তে মুহূর্তে—কখনও শীত, কখনও বৃষ্টি। সাদা মেঘে ঘেরা এই উপত্যকা যেন মেঘেরই রাজ্য। এখানে গেলে মনে হয় আপনি সেই মেঘের জগতের বাসিন্দা, যেখানে সাদা মেঘের ভেতর কোনো রূপকথার রাজপুত্রের খোঁজ পেতে পারেন।

সাজেকের সর্বোচ্চ স্থান হলো কংলাক পাহাড়। চূড়ায় উঠে মিজোরামের সীমান্তের পাহাড় আর সবুজের মিতালি দেখতে পাবেন, যা আপনাকে যান্ত্রিক জীবন থেকে কিছুক্ষণের জন্য মুক্তি দেবে। এখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়। এই অপরূপ দৃশ্য আপনার হৃদয়কে পুলকিত করবে, এবং আপনি সারাজীবন এই সৌন্দর্য স্মৃতিতে ধরে রাখবেন।

বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর পর্যটনস্থল সাজেক ভ্যালি। এটি রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত এবং এর আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। সাজেক সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এবং এটি ত্রিপুরা-মিজোরামের সীমান্তবর্তী এলাকা। যদিও সাজেক রাঙ্গামাটিতে অবস্থিত, তবে খাগড়াছড়ি থেকে যাওয়া অনেক সহজ। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে সাজেকের দূরত্ব মাত্র ৪০ কিলোমিটার হওয়ায় ভ্রমণকারীরা সাধারণত সেখান থেকেই যাত্রা শুরু করেন।

সাজেক ভ্রমণের জন্য বর্ষার শেষ কিংবা শীতকালই সবচেয়ে ভালো সময়, কারণ এই সময়ে প্রকৃতি তার সেরা রূপ দেখায়।

সাজেকে যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির বাসগুলো—শ্যামলী, হানিফ, এস আলম, সৌদিয়া এবং শান্তি পরিবহন—চালু রয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে বাসগুলো ছেড়ে যায় এবং প্রায় ৮ ঘণ্টায় খাগড়াছড়ি পৌঁছে যায়।

খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যেতে হলে ব্যবহার করতে হবে খোলা জিপ, যা স্থানীয়ভাবে “চান্দের গাড়ি” নামে পরিচিত। এই গাড়ির ভাড়া দুই দিনের জন্য ৬,৫০০ থেকে ১০,০০০ টাকার মধ্যে হয়। সাজেকে যাওয়ার পথে প্রথমে যেতে হবে দীঘিনালা, সেখান থেকে অল্প সময়ের জন্য ঘুরে আসতে পারেন হাজাছড়া ঝর্ণা থেকে। সাজেকে পানি স্বল্পতার কারণে গোসল করার সুযোগ কম থাকে, তাই এই ঝর্ণায় গোসল সেরে নিতে পারেন।

দীঘিনালা থেকে সাজেকে যাওয়ার পথে সেনাবাহিনীর এসকোর্টে ভ্রমণ করতে হয়। দীঘিনালা থেকে বাগাইহাট হয়ে মাচালং হাট পেরিয়ে সাজেকে পৌঁছাতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। সাজেকের আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা ভ্রমণটি নিজেই একটি বিশেষ আকর্ষণ। চারপাশের পাহাড় আর সবুজ দৃশ্য আপনাকে যাত্রার ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে।


Posted

in

by

Tags: