কাঠগোলাপ ফুলটি তার নান্দনিক সৌন্দর্যের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এটি এমন এক ধরনের ফুল, যা শৌখিন মানুষের বাড়ির প্রবেশপথে বা উঠানের পাশে জায়গা করে নেয়। কিন্তু আধুনিককালে ছোট পরিবারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে বসতি নির্মাণের প্রয়োজনে অনেক গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে, যার ফলে এই মূল্যবান গাছগুলির অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে।

এই গাছের কাণ্ড এবং শাখা-প্রশাখা খুবই নরম ও কোমল। অঞ্চলভেদে এই গাছটিকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়, যেমন গুলাচিচাঁপা, কাঠচাঁপা, চালতাগোলাপ, গুলাচ, গোলাইচ, গরুড়চাঁপা ইত্যাদি। কাঠগোলাপের ইংরেজি নাম হলো “Frangipani”, এটি Apocynaceae পরিবারের সদস্য এবং Plumeria গণভুক্ত। এই গণের প্রায় ৭ থেকে ৮ প্রজাতির গাছ রয়েছে, যা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু অঞ্চলের শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত।

শীতকালে গাছটির পাতা ঝরে যায় এবং বসন্তকালে আবার নতুন পাতা গজায়। কাঠগোলাপ গাছ সাধারণত ৭ থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এর পাতা ছাতিম গাছের পাতার মতো, শিরা-উপশিরা উজ্জ্বল। গাছের ডালে ডালে ফুটে ওঠা একগুচ্ছ ফুল যে কাউকে মুগ্ধ করবে। ফুলগুলো সুগন্ধযুক্ত, আকারে মাঝারি এবং দেখতে মনোমুগ্ধকর। পাঁচটি পাপড়ি থাকে, যা দুধের মতো সাদা। কিছু ফুলের পাপড়িতে হলুদ, লালচে গোলাপি মিশ্রণ থাকে। ফুলগুলো গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরৎকালে বেশ ভালো ফুটে।

কাঠগোলাপ চাষের উপায়

কাঠগোলাপ চাষ করতে খুব বেশি পরিশ্রমের প্রয়োজন নেই। কিছু সতর্কতা মেনে চললেই কাঠগোলাপ গাছ ভালোভাবে বাড়বে:

  1. মাটি প্রস্তুত: দোআঁশ মাটিতে কাঠগোলাপ ভালো জন্মে, তাই প্রথমে দোআঁশ মাটি সংগ্রহ করুন।
  2. বীজ রোপণ: বীজগুলো ছুরি দিয়ে সুন্দরভাবে কেটে একদিন পানিতে ভিজিয়ে রাখুন, তারপর জমিতে রোপণ করুন। বসন্তের শেষ কিংবা গ্রীষ্মের শুরুর দিকে এটি রোপণ করা সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
  3. পানি সঞ্চালন: গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি দিন এবং মাটির স্যাঁতসেঁতে ভাব বজায় রাখুন।
  4. আগাছা পরিষ্কার: আগাছা জন্মালে তা কেটে ফেলুন।
  5. সারের ব্যবহার: উচ্চ নাইট্রোজেনযুক্ত সার এড়িয়ে চলুন। কাঠগোলাপের জন্য জৈব সারই যথেষ্ট।
  6. রোগবালাই প্রতিরোধ: পাতা দাগযুক্ত হলে পোকায় আক্রান্ত হয়েছে কিনা দেখুন। আক্রান্ত পাতায় হর্টিকালচারাল তেল স্প্রে করুন।

সঠিকভাবে যত্ন নিলে শীত আসার আগেই কাঠগোলাপ গাছে ফুল ফুটবে। নতুন বীজ সংগ্রহ করে শীতকালে তা সংরক্ষণ করতে পারেন, যা পরবর্তী মৌসুমে ব্যবহার করা যাবে।